মায়ের কাছে কমরেড কিষেনজির চিঠি
মা
ভাল আছ ?
রাষ্ট্রীয় দমন ও নিরাপত্তা বাহিনীর কম্বিং অপারেশনের মধ্যেও জনগন বনভুমির ভাই বোনদের রক্ষা করছে। সরকারের দমনমুলক ব্যবস্থা বাড়ছে, জনগনের আন্দোলনেরও ঘটছে ক্রম অগ্রগতি । এখানে সব কিছুই সুন্দর। তুমি নিশ্চয়ই হায়দারাবাদে ছাত্রদের লক্ষ্য করেছ। ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কাকাতিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আন্দোলন, দশকব্যাপী যুবকদের আত্মত্যাগ এমনকি আত্মহত্যা সত্বেও তেলেঙ্গানা ঘোষনা করা হয়নি। আমরা একটি আলাদা তেলেঙ্গানার জন্য সমর্থন দিয়েছিলাম। এর চেয়েও বেশি একটি গণতান্ত্রিক তেলেঙ্গানা, গণতান্ত্রিক দন্ডকারন্য, গণতান্ত্রিক লালগড়। এমনকি একটা আলাদা গুর্খাল্যান্ডের জন্যও আমরা লড়াই করছি। একটি আলাদা রাজ্যের আকাঙ্ক্ষা যতক্ষন না বাস্তবায়ন হয়, সংগ্রাম চলবে। তেলেঙ্গানা ইস্যুতে সব রাজনৈতিক দলগুলো কুট কৌশল খেলছে।কিন্তু শুরু থেকেই আমরা একটি আলাদা তেলেঙ্গানার জন্য দাবি তুলেছি, লড়াই করেছি – একটি গণতান্ত্রিক তেলেঙ্গানার জন্য। এই ইস্যুকে ডাইভার্ট করার জন্য কংগ্রেস পার্টি অন্তঃকোন্দল শুরু করে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রি রোজাইয়ার নেতৃত্বে রাজ্যে বিনামুল্যে চাল বিতরন শুরু হয়। কিন্তু এসবের কোন কিছুই আলাদা তেলেঙ্গানার জন্য মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে দমাতে পারেনি। এই ইস্যুর মোড় ঘুরানোর জন্য তারা সবাই মিলে হাংগামা শুরু করে, মুসলিমদের জন্য চার শতাংশ আসন সংরক্ষনের দাবি জানায়। নিজেদের বাচানোর জন্য কংগ্রেস, বিজেপি, আর ডি পি একই নৌকায় উঠে পড়ে।
এ সময়ে প্রধান মন্ত্রী মনমোহন সিং, পুলিশ মন্ত্রী চিদাম্বরাম ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কাকাতিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সহিংস আন্দোলনের মুখে আলাদা তেলেঙ্গানার প্রতি ইতিবাচিক সাড়া দেন। কিন্তু কথা রাখার কোন প্রচেষ্টাই তারা নেয়নি। আমরা আমাদের অধিকারের জন্য যে সংগ্রাম তারই অংশ হিসেবে তেলেঙ্গানাকে সমর্থন করি। সরকার আমাদের সমর্থন দেখে আন্দোলনকে বিনাশ করতে চায়। লালগড়ের মতোই ওসমানিয়া
বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শক্তি মোতায়েন করে। জনগণ জানে মাওবাদীদের সমর্থন কি ? শাসকদের হিংস্র থাবা থেকে জনগনের ইতিহাস, মুসলিম, হিন্দু, আদিবাসী, দলিত সর্বোপরি হায়দারাবাদকে রক্ষাকরা আন্দোলনের পবিত্র দায়িত্ব। গণতান্ত্রিক তেলেঙ্গানা ও একটি ফেডারেল ইন্ডিয়ার জন্য সংগ্রামই মাওবাদীদের লক্ষ্য।
রাষ্ট্র আমাদের উপর যুদ্ধ ঘোষনা করেছে। দলিতদের হাতে জমি, আদিবাসীদের হাতে জমির দাবীতে আন্দোলনের ক্রমঅগ্রগতি ঘটছে। মনমোহন সিং, নবিন পট্টনায়ক ও চিদাম্বরাম ওড়িশ্যা, ছত্তিসগড় ও ঝাড়খন্ডের হাজার হাজার একর জমি টাটা, জিন্দাল ও পসকোকে বরাদ্দ দিয়েছে। যখন চল্লিশ হাজার একর জমি বহুজাতিক কোম্পানিকে দিয়ে দেয়া হয়, জনগন বহুবিধ সংগ্রামে নেমে পড়ে এমনকি ভুমির জন্য নিজেদের রক্ত ঝরাতে বাধ্য হয়। আমরা সেই জনগনের সাথে। তুমি নিশ্চয় অবগত আছ, আমাদের নেতৃত্বে আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় জনযুদ্ধ এগিয়ে যাচ্ছে।
মা !
তোমার মতো আরো লাখ লাখ মায়ের জন্য, আদিবাসী এলাকায় বিরাজমান বঞ্চনা ও প্রতারণার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করছি। সমতলে আমাদের প্রাকৃতিক বেগুন অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে, বিটি বেগুন তার স্থান দখল করে নিচ্ছে। যখন আমরা এর বিরোধিতা করলাম, আমাদের বিরুদ্ধে গ্রীনহাণ্ট অপারেশন শুরু করা হল। সরকার মিডিয়াকে বুঝাচ্ছে, মার্চ ২৫-২৬ এ আমি অন্য আরো কমরেডদের সাথে এনকাঊন্টারে নিহত হয়েছি। আমি, আমার কমরেডরা নিরাপদে আছি। জনগন আমাদের রক্ষা করছে, চোখে চোখে রাখছে।
মা !
কেদোনা।
কেবল তুমি একা নও।ওহ ! ভারতের কোটি কোটি মা !
আমরা নিরাপদে আছি, ভাল আছি। তোমার সব সন্তানরা আজ এক মহাযুদ্ধে। যদি আমরা এই যুদ্ধে জয়ী হই, এক মহা সুর্যোদয় হবে – শান্ত বাতাস, কোন প্রকার দমন নির্যাতন ব্যতীত এক অভাবনীয় নতুন পরিবেশ। সম্প্রতি অরুন্ধতী রায় ছত্তিসগড়ের দণ্ডকারণ্য ঘুরে গেছেন, বনভুমির তোমার অনেক সন্তানদের সাথে দেখা করেছেন এবং তাদের নিয়ে লিখেছেন যাতে বাইরের পৃথিবী তাদের ব্যাপারে জানতে পারে। মা, তুমি যদি আমাদের লক্ষ্য সম্পর্কে জানতে চাও, ওটা পড়তে পার।
মা !
আমি আছি।
লাল সালাম, লাল সালাম।
আমি আছি।যখনই সুযোগ পাই, তোমাকে লিখব।
তোমার
কোটি। ভেনু, ময়না, রাজ রেড্ডি ও হাজারো সন্তানের পক্ষে।