সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র

কোভিড-১৯ মহামারীতে চীন

চীন ভিত্তিক একটা গোপন এমএলএম গ্রুপ থেকে আমরা এই লেখাটা পেয়েছি।

২০২০ এর এপ্রিলে, বেশিরভাগ দেশ মহামারীকে যদিও কার্যকরীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি, চীনে মহামারী ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হয়ে আসছে। ফলে, সাম্প্রতিক সময়ে, সাম্রাজ্যবাদী চীনের দালালেরা তথাকথিত ‘চীনের অর্জন’, ‘চীনা রাস্তা’, ‘চীনা মডেল’ এবং অন্যান্য শব্দগুলা চিৎকার করা শুরু করেছে, তবে কি আসলেই কথিত ‘চীনা ব্যবস্থা’ চীনকে মহামারী থেকে বের হয়ে আসতে নেতৃত্ব দিয়েছে? এবং আসলেই কি চীনা কর্তৃপক্ষের ‘জনগণের সেবা’ নীতির কারণে মহামারী আরো দ্রুত শেষ হয়েছে? চীনা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছাড়া আসলেই মহামারী কাটিয়ে উঠা যেত না, কিন্তু এটা থেকে কি সিদ্ধান্ত নেয়া যায় যে চীনা ব্যবস্থার সুবিধা আছে অথবা সাম্রাজ্যবাদী চীনের শাসক শ্রেণি আসলেই জনগণের সেবা করে?

না, কখনোই না!

গুরুতর জননিরাপত্তা সংকট কাটিয়ে উঠতে প্রথমে একটা দেশের কি দরকার? কেবল একটা রাজনৈতিক ব্যবস্থা? অবশ্যই না। এই ব্যবস্থার আগে, অন্ততপক্ষে সেখানে পর্যাপ্ত ও স্থানান্তরযোগ্য জনশক্তি ও বস্তুগত সম্পদ থাকতে হবে। বর্তমানে চীন একটা উদীয়মান সাম্রাজ্যবাদী দেশ যার বিশাল ভূমিতে অঢেল সম্পদ রয়েছে; সাম্রাজ্যবাদী চীনের আছে বিশ্বের সবচেয়ে ভালো শ্রমিক ও তাদের বেশিরভাগেরই আছে সরল দেশপ্রেমী মনোভাব । এটা অনেকটা দুধারী তলোয়ারের মতো (বুর্জোয়াদের দ্বারা তাদের সাথে প্রতারণাও); সমাজতান্ত্রিক নির্মাণের সময়কে ধন্যবাদ এজন্যে যে সাম্রাজ্যবাদী চীনের উৎপাদন মান বিশ্বের এক নম্বর এবং সেখানে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনে সব রকমের উৎপাদন পদ্ধতি হাজির আছে৷ শক্তিশালী বস্তুগত শক্তির সাহায্য পাওয়ার কারণেই চীন মহামারী থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছে। অন্যদিকে, আমেরিকার মতো পুরানা সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলার পুঁজি বাড়ানোর লোভের কারণে এবং পুরানা সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলার উদ্বৃত্ত মূল্যের হার হ্রাস পাওয়ার কারণে পুঁজি ফিন্যান্স পুঁজিতে প্রবাহিত হয়েছে। যার পরিণতি হলো বড়-মাত্রায় শিল্প কার্যক্রম হ্রাস এবং উৎপাদন কার্যক্রম বিদেশে স্থানান্তর করা, এই পরিস্থিতিতে স্থানান্তরযোগ্য বস্তুগত শক্তি কিভাবে পর্যাপ্ত হতে পারে? চীনে এখনো বড় মাত্রায় শিল্প কার্যক্রম হ্রাস পায়নি, যার প্রধান কারণ চীনের দেশীয় শ্রম এখনো যথেষ্ট সস্তা যা পুঁজিবাদীদের উচ্চ উদ্বৃত্ত মূল্যের হারকে বজায় রাখে।

স্থানান্তর করার জন্যে জন্যে যথেষ্ট বস্তুগত শক্তির উপস্থিতি এটা দেখায় যে চীন একটা উদীয়মান সাম্রাজ্যবাদী দেশ। সুতরাং, এটা পুরানা সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলার মতো এটা ক্ষয়িষ্ণু না । এছাড়া আর কিছু না। আবার, চীনের উত্তম ‘মহামারী বিরোধী’ কাজের ভিত্তি হলো একচেটিয়া বুর্জোয়া রাষ্ট্র, যা সমাজতন্ত্রের নামে জনগণকে ধোকা দেয় এবং লাঠি ব্যবহার করে নির্মমভাবে শ্রমিক আন্দোলন দমন করে। চীনের মহামারী বিরোধী ‘ভালো পারফরমেন্স’-এর সাথে পুরানা সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলার ‘খারাপ পারফরমেন্স’-এর তুলনা করার ব্যাপারটা আসলে চেরনোবিলে পারমাণবিক দুর্ঘটনায় সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘ভালো পারফরমেন্স’-এর সাথে ফুকোশিমা পারমাণবিক দুর্ঘটনায় জাপানের ‘খারাপ পারফরমেন্স’-এর তুলনা করার মতো। চেরনোবিল পারমাণবিক দুর্ঘটনা মোকাবেলায় ‘ভালো পারফরমেন্স’ সোভিয়েত ইউনিয়নের সামাজিক সাম্রাজ্যবাদী উপাদানগুলাকে আড়াল করতে পারেনি। একই ভাবে, চীনা সাম্রাজ্যবাদের উপাদানগুলাকে মহামারী মোকাবেলায় ‘ভালো পারফরমেন্স’ দিয়ে ঢেকে দেয়া যাবে না।

মহামারীতে চীনের উত্তম পারফরমেন্সের জন্যেই কি চীনের রাজনৈতিক শক্তিকে সমর্থন করা যায়? উত্তরটা হলো, অবশ্যই না। প্রথম দিকে বুর্জোয়া আমলারা মহামারীর আলামতকে গুজব বলে উড়িয়ে দেয়; যখন মহামারী বিস্তৃত হতে শুরু করে, তারা ‘প্রতিরোধযোগ্য ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য’-এর মতো শব্দ কপচানো শুরু করে; মহামারী সামাল দেয়ার সময়, যখন নাগরিকের কাছে জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রি সরবারহ করছিলো, তখনও তারা নর্দমা ও দুর্গন্ধের মতো কিছু বাণিজ্যিক পুঁজিবাদীর সাথে আঁতাত করে, যাতে খাদ্য সরবারহকে একচেটিয়া করে অতিরিক্ত মুনাফা করা যায়। কিছু মানুষ এই একচেটিয়া ভাঙতে চেয়েছে এবং পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। কিছু মানুষ প্রতিবাদ করে এবং, তখন আবর্জনার ট্রাকে করে কমিউনিটি (বুর্জোয়া আমলাতন্ত্রের শিখর তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে) তাদের জন্য সবজি পাঠিয়ে তাদের একহাতে নেয়।

উল্লেখ করা দরকার যে, হুবেইতে স্থানীয় রেড ক্রস ফান্ড ও দ্রব্য সামগ্রি দখল করে, দ্রব্য সামগ্রির অভাবে থাকা পাবলিক হাসপাতালকে তারা উপেক্ষা করে, এবং প্রচুর পরিমাণের দ্রব্য সামগ্রি নেতাদের ও প্রাইভেট হাসপাতালের জন্য পাঠিয়ে দেয়। এই ঘটনা এতো খোলাখুলি ও নির্লজ্জ ছিল যে জনগণ আর এটা মেনে নিতে পারেনি। রেড ক্রসকে উপেক্ষা করে, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎপাদকারী ও হাসপাতালের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ সাপ্লাই চেইন স্থাপন করে এবং পাবলিক হাসপাতাল থেকে জরুরি প্রয়োজন পূরণ করে। জনগণের দ্বারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সবগঠিত এই ‘মহামারী বিরোধী’ এই কাজের ধারা স্বীকৃতির যোগ্য, কিন্তু হুবেই রেড ক্রস ও কিছু সরকারী বিভাগ স্বীকৃতি দেওয়ার মতো এই কাজকে ‘অবৈধ’ হিসেবে চিহ্নিত করে। ভাসা-ভাসা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, এটা সমন্বিত ব্যবস্থাপনার অনুকূলে না, কিন্তু বাস্তবে এটা আসলে ঘুষের টাকা বুর্জোয়া আমলার পকেটে যাওয়ার জন্যে অনুকূলে না।

কিন্তু এখনও এমন লোক পাওয়া যাবে যারা মানবে না এবং বলবে, চীনের চিকিৎসা ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, এই পাবলিক চিকিৎসা ব্যবস্থাও নির্দিষ্টি ‘চীনা ব্যবস্থা’রই অংশ। সমাজতান্ত্রিক সময়ের রেখে যাওয়া পাবলিক হাসপাতালগুলা আসলেই বিলুপ্ত হয়নি এবং পাবলিক হাসপাতালগুলো এখনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সমস্যাটার দিকে তাকিয়ে শুধু বর্তমান না, চলমান ট্রেন্ডের দিকেও দেখতে হবে। বছরের পর বছর ধরে, চীনা সাম্রাজ্যবাদী কর্তৃপক্ষের ‘গভীর সংস্কার’ বা নয়া-উদারপন্থী অধপতনের সাথে সবকিছুই বেসরকারিকরণ করা হচ্ছে এবং চিকিৎসা ব্যবস্থাও এর ব্যতিক্রম না। গত কয়েক বছর ধরেই, ওয়েই জেসিকে হত্যাকারী এই ধরণের ‘পুতিয়ান’ হাসপাতাওগুলা (মূলত বেসরকারী ধরণের হাসপাতাল) ‘ব্যাঙের ছাতার’ মতো ‘গজিয়ে উঠছে’। একই সাথে, পাবলিক হাসপাতালগুলাকে প্রচন্ডভাবে চাপে ফেলা হচ্ছে। অন্যদিকে, জনগণের আস্থা ধরে রাখার চেষ্টা করে, বছরের পর বছর ফান্ড কমানো হয়েছে এবং, প্রতিবছর সামর্থ্য খুইয়েছে। জীবিকা উপার্জনের জন্য অনেক ডাক্তারকে পাবলিক হাসপাতাল থেকে প্রাইভেট হাসপাতালে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। অথচ, এই মহামারীতে প্রাইভেট হাসপাতালগুলা খুব কম ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারেছে। এছাড়াও, চিকিৎসা সেবার মতো সামাজিক নিরাপত্তা তথাকথিত ‘সমাজতান্ত্রিক চীন’র ক্ষেত্রে অনন্য কিছু না। ব্রিটেনের National Service System (NHS) থাকলেও, কেউ ব্রিটেনকে সমাজতান্ত্রিক দেশ মনে করে না। যারা মনে করে যে চীনের চিকিৎসা ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং এই কারণে মনে করেন যে, চীন সমাজতান্ত্রিক দেশ, তারা অবশ্যই সমাজতন্ত্র কি সেটা বুঝে না।

স্পষ্টত, মহামারী থেকে আগে পরিত্রান পাওয়ার ঘটনা চীনা সাম্রাজ্যবাদী রাজনৈতিক ব্যবস্থার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে না৷ মহামারী থেকে আগে পরিত্রাণ পাওয়ার ব্যাপারটাকে ব্যবহার করে সাম্রাজ্যবাদী চীনকে পুরানা সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলার চেয়ে ভিত্তিগতভাবে উৎকৃষ্ট দেখানোটা অবশ্যই ভুল।

আবার, মহামারীর ব্যাপারে সাম্রাজ্যবাদী চীনা কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক সাড়া কি জনগণের সেবার ধারণা থেকে ভিন্ন?

মহামারী মোকাবেলায় চীনের আপেক্ষিক সুবিধাটা হলো তার বৈশ্বিক কারখানা হওয়াটা, যা মূলত শ্রমিকদের উপর নিরলস চাপ দেওয়ার জন্যে শক্তিশালী। ‘জনগণকে দুর্যোগ থেকে বাঁচানো’ চীনা সাম্রাজ্যবাদী কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য ছিল না, বরং উদ্দেশ্য ছিল পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা। যাই হোক, শ্রমিকরা সবাই অসুস্থ হলে, বুর্জোয়ারা কিভাবে উদ্বৃত্ত মূল্য শোষণ করবে?

আবার, মহামারী কমে আসার আগে, চীনা সাম্রাজ্যবাদী বুর্জোয়ারা শোষণ ও নিপীড়নের তীব্রতা বাড়াতে অপেক্ষা করতে পারেনি। মহামারী মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা লেইশেনসান হাসপাতাল ও হাইশেনসান হাসপাতালের নির্মাণ শ্রমিকদের শুধু বেতনই বকেয়া রাখা হয়নি, আইসোলেশনে তাদের খাদ্য খরচের নামে চাপেও রাখা হয়েছিল, একই সময়ে, ধূর্ত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মজুরি যা বকেয়া ছিল তা মূল স্তর থেকে ১% কমিয়ে দেয়া হয়। কিছু শ্রমিক প্রতিবাদ করে, কিন্তু দমন, লাঠি, জেরা ও আটক ছাড়া অন্যকোনো বিনিময় হয়নি; মহামারী প্রতিরোধের নামে মালিকরা চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরি কারখানার শ্রমিকদের বোনাস ও অন্যান্য আয় বাতিল করে; মহিলা ডাক্তার ও নার্সরা, যারা মহামারীর কঠিন লড়াই লড়েছেন, চীনা কর্তৃপক্ষ তাদের প্রপাগান্ডার বস্তু হিসেবে ব্যবহার করেছে, কিছু মহিলা নার্সকে তাদের চুল কামাতে বাধ্য করা হয়, সংকটপূর্ণ মহামারী এলাকায় কিছু মেডিকেল স্টাফ পাঠিয়ে তাদের প্রাপ্য ভর্তুকি ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয়; একদিকে চিকিৎসা কর্মীরা তাদের মহান প্রচেষ্টা দিয়ে মহামারীর সাথে লড়েছেন, কিন্তু অন্যদিকে তারা শুধু মূল বেতনটা পেয়েছেন, এমনকি মূল বেতনও পুরোপুরি পায়নি।

এখন, এই মুহুর্তে যখন মহামারী শান্ত হয়েছে কিন্তু পুরোপুরি প্রশমিত হয়নি, কাজ ও উৎপাদন পুনরারম্ভ বা, পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাকে সাম্রাজ্যবাদী চীনা কর্তৃপক্ষের এজেন্ডাভুক্ত হয়েছে। যখন শ্রম উৎপাদনের পুনরারম্ভকে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে, বুর্জোয়াদের প্রতি সাম্রাজ্যবাদী চীনা কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত উদারতা দেখাচ্ছে, অনেক বেশি ভর্তুকি দিয়ে এবং কম-সুদে ঋণ বা, এমনকি বিনা সুদে ঋণ দিয়ে, কিন্তু সংকটের সময় শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় ভর্তুকিও দেয়নি। যা দিয়েছিল, তা বড়জোড়, সামান্য টাকার পারিশ্রমিক ছিল, যা অনেকটা ভিক্ষার মতো। একটা মার্ক্সবাদী শ্রমিকের দল কিছু তথ্য লিপিবদ্ধ করেঃ কর্তৃপক্ষের মানব সম্পদ ও সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রনালয় নির্লজ্জভাবে ঘোষণা দিয়েছে যে “ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চাইলে কর্মীর বেতন ও বকেয়া বেতন কমানোর ব্যাপারে দরাদরি করতে পারবে” “যখন উৎপাদন স্থগিত হবে, শ্রমিকদের ছুটিগুলো বাৎসরিক ছুটির সাথে কাটা যাবে” এবং একই সাথে, কাজের সময়ে কেউ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলে তা কাজের সময়ে ইনজুরি হিসেবে দেখা হবে না, ফলে তার জরিমানাও দেয়া হবে না। Foxconn-নামের এক বিশাল উৎপাদনকারী গ্রুপ, যারা সস্তায় প্রচুর শ্রম-শোষণ করে, তারা কারখানার সব জায়গা থেকে অগণিত অস্থায়ী শ্রমিক ছাটাই করে; একটা আন্তর্জান্তিজ ব্যবসায় গোষ্ঠী “Hisense”- হাজার হাজার শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করেছে বলে প্রকাশ পেয়েছে; শেনজেনে, চেঙ্গুয়ান (শহর প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অফিসার) এক সাধারণ টেক-আওয়ে শ্রমিককে কোনো কারণ ছাড়া মারধর করে, পুলিশি নির্মমতা ক্রমশ বাড়ছে, BYD একটা অটোমোবাইল উৎপাদনকারী বিশাল গ্রুপ যারা তাদের শ্রমিকদের প্রতিমাসে ৩০০ ইয়েন বেতন দিচ্ছে, যা দিয়ে চীনের প্রথম বা দ্বিতীয় সারির শহরে শুধু তিনদিনের খাদ্য পাওয়া যাবে। পরিশেষে, চীনের একজন বেসরকারী প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, চীনের বেকারত্বের হার প্রায় ২০%।

মার্ক্সবাদী গ্রুপের দলিলগুলা ও প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীর বিশ্লেষণ প্রমাণ করে যে শ্রমিক শ্রেণির জনগণ নজিরবিহীন কষ্ট সহ্য করছে, শ্রমিক শ্রেণির জনগণ নির্মম অত্যাচার সহ্য করছে, কিন্তু জনগণ যে সমস্যায় ভুগছে তা কর্তৃপক্ষ এখনও চেপে যাচ্ছে, নিপীড়ন ও মিথ্যা প্রপাগান্ডাকে ব্যবহার করা হচ্ছে যে একটা ঐকতানে ভরপুর দৃশ্য তৈরি, যার কোনো অস্তীত্ব নাই। উপরের তথ্যগুলা সম্পূর্ণভাবে প্রমাণ করে যে চীনা সাম্রাজ্যবাদী কর্তৃপক্ষের একচেটিয়া বুর্জোয়াদের অত্যাচারি দানবরা জনগণের কোনো উপকারই করেনি, বরং বুর্জোয়া শ্রেণির স্বার্থকে সেবা করেছে।

এছাড়া, এইটাও খেয়াল করা জরুরি যে চীনের জনগণ প্রথম এই মহামারীটাতে বিশাল ত্যাগ স্বীকার করেছিল। কারণ, মহামারী বিস্তৃত হচ্ছিলো ঐতিহ্যবাদী চীনা বসন্তের সময়ে, চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরি কারখানার শ্রমিকরা যারা ছুটিতে ছিল, কিছু শ্রমিক যারা হুয়োশেনসান হাসপাতাল ও লিউশেনসান হাসপাতাল নির্মাণ করেছিল, ডাক্তার ও কুরিয়ার ডেলিভারি কর্মী এবং অন্যান্য অগণিত শ্রমিক তাদের পরিবারের পুনর্মিলন ছেড়ে আসে, তাদের ছুটি ছেড়ে দেয়, সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকির মুখোমুখি হয়, এবং কাজে ফিরে যায়। অন্যান্য যাদের আর্জেন্ট কাজ শুরু করতে হয়নি, তারা নিয়ম মেনে ঘরে অবস্থান করেছে এবং বেকারত্ব ও বেতন কাটা যাওয়ার চাপ নিয়ে তারা দুই মাস ঘরে থেকেছে। চীনা জনগণের মহান ত্যাগের কারণেই মহামারী নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। জনগণের এই সংগঠন সরল দেশপ্রেমিক চেতনা থেকে তৈরি, যা দেখায় যে চীনা জনগণ সংগঠিত হতে পারে। মহামারী নিয়ন্ত্রণে আনতে চীনা জনগণের এই ত্যাগ স্বীকৃতি দেয়ার মতো। মহামারীর সময়ে চীনা জনগণের এভাবে সংগঠিত হওয়া তাদের ভেতরের বিশাল বিপ্লবী সম্ভাবনাকেই প্রকাশ করে।

যখন চীনা জনগণের এই সরল দেশপ্রেমিক চেতনা সর্বহারার বিপ্লবী চেতনায় পরিণত হবে, তখন চীনা সাম্রাজ্যবাদের সমাপ্তি আসবে, চীনের জনগণ আবার তাদের বিপ্লবী মহান বিপ্লবী ঐতিহ্য সাথে নিয়ে দাঁড়াবে এবং একচেটিয়া বুর্জোয়াদের স্বৈরাচারী অত্যাচারকে পুরোপুরি পরাজিত করবে! চীনা বিপ্লবীরা একত্রে কাজ করবে এবং মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদের নেতৃত্বে এই প্রচেষ্টায় যোগ দিবে। জনগণ বিপ্লব সংগঠিত করুক এবং গণযুদ্ধের বিস্তৃত সমুদ্রে প্রতিক্রিয়াশীলদের ডুবিয়ে দিক!