গণযুদ্ধ

হাসিনা-আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ উচ্ছেদ করুন! বুর্জোয়া ভোট নয়, বিদেশের দালাল বড় ধনী শ্রেণির রাষ্ট্র-ক্ষমতা নয়, গণযুদ্ধের মাধ্যমে গণক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করুন!

হাসিনা-আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ উচ্ছেদ করুন!

বুর্জোয়া ভোট নয়, বিদেশের দালাল বড় ধনী শ্রেণির রাষ্ট্র-ক্ষমতা নয়,
গণযুদ্ধের মাধ্যমে গণক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করুন!

বুর্জোয়া রাজনৈতিক দলগুলোর বহু নাটকের পর তাদের সকলের অংশগ্রহণে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। যাদের সাথে কোনোদিন সংলাপ হবে না বলে হাসিনা-আওয়ামী লীগ গলাবাজী করছিল, এবং যাদেরকে ‘স্বাধীনতার শত্রু’, ‘আগুন সন্ত্রাসী’ ও ‘খুনী’ বলে সকাল-বিকাল গালি দিত, তাদের সাথেই একটেবিলে বসে হাসিনা খানাপিনা করেছে। অন্যদিকে যে হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বলে জেহাদের ডাক দিয়েছিল বিএনপি-জোট, তারাও ‘আন্দোলনের অংশ’ হিসেবে হাসিনা-আওয়ামী লীগকে মসনদে রেখেই ভোট করছে। এসবের মধ্য দিয়ে এই বুর্জোয়া দলগুলোর প্রতারণা, বুর্জোয়া শ্রেণিগত যোগসাজশ ও গণবিরোধী রাজনীতির মুখোশ আবারো খুলে পড়েছে।

কিন্তু এ সাময়িক ও আংশিক সমঝোতাও যেকোনো সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে। এই গণবিরোধী শাসক শ্রেণির নিজেদের মধ্যকার গণবিরোধী কুত্তা কামড়া-কামড়ি শেষ হবার নয়। এছাড়া হাসিনা-আওয়ামী লীগ-সরকার যেকোনো উপায়ে একটি নির্বাচনী প্রহসন করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার সকল প্রচেষ্টাই চালাচ্ছে। গুরুতরভাবে ‘অসমতল ক্ষেত্র’ ছাড়াও পুলিশ-আর্মি-ইসি-আমলা-অফিসারদের মাধ্যমে ভোট-নিয়ন্ত্রণ, বিপুল অর্থ ব্যয়, প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মবাদী দলগুলোর সাথে মাখামাখি, ভোট ডাকাতি, সন্ত্রাস, কারচুপির সকল অপচেষ্টাই তারা চালাচ্ছে ও চালাবে। এসব কারণে নির্বাচনের আগে বা পরে বিরোধী জোট নির্বাচন থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হতেও পারে। সরকারি ও/বা বিরোধী জোটের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ‘তৃতীয় শক্তি’ নামের পর্দার পিছনের কথিত ‘অরাজনৈতিক’ গ্রপটিও ক্ষমতা হাতে তুলে নিতে পারে। নির্বাচন স্থগিত বা বাতিলও হতে পারে। আওয়ামী লীগ ভোটে হেরে গেলে আরো হাজারো ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের পথ খোলা রেখে এমনকি ভোটের পরও প্রায় একমাস সময় ধরে চলমান সংসদটিই বজায় রাখার ব্যবস্থা তারা করেছে। এসবই তাদের ফ্যাসিস্ট চরিত্র থেকে ও তাদের নিজেদেরই তৈরি সংবিধান পরিপন্থী বেআইনী ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার জন্যই তারা করছে।

’৭১-সালে ভারতের শক্তিতে ক্ষমতাসীন হবার পর থেকেই আওয়ামী লীগ একটি ফ্যাসিস্ট পার্টি হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছে। এর উলঙ্গ প্রমাণ তারা দেয় ’৭৫-সালে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ‘বাকশাল’ গঠন করে সকল বুর্জোয়া বিরোধী রাজনীতিকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। আর বিগত ২০১৪ সালে একটি ভোটারবিহীন নির্বাচনের প্রহসন করে ভারতের প্রত্যক্ষ মদদে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে তারা ভিন্নরূপে একই কাজ করেছে। তারা নিজেদেরকে ভারতের একনিষ্ঠ দালাল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য। এবারও তারা সেটাই চেয়েছিল, যাতে একতরফা একটি নির্বাচনের নাটক দেখিয়ে ক্ষমতাকে ধরে রাখা যায়। এবং নিজেদের চরম শোষণ-লুণ্ঠন-দুর্নীতি-দুঃশাসন-স্বৈরাচার-বিদেশি দালালি-অর্থ পাচার-অত্যাচার-নিপীড়ন অব্যাহত রাখা যায়। কিন্তু একদিকে চরম শোষণ-নিপীড়ন ও গণবিরোধী অপতৎপরতাগুলোর কারণে তারা গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে ফ্যাসিবাদী শাসনের ফলে শাসক শ্রেণির এবং বিদেশি প্রভুদের বিরাট অংশ থেকেও তারা সমর্থন হারিয়ে ফেলেছে। ফলে তারা ভোটে ক্ষমতা হারানোর ভয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তাই তারা যেকোনো মূল্যে ভোট নামক নাটকে জিতবার সকল ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে বিরোধী জোটসহ শাসকশ্রেণির মধ্য থেকেই নির্বাচন অবাধ হবে কিনা তা নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। যতই সাম্রাজ্যবাদী ও ভারতীয় ‘গণতান্ত্রিক’ প্রভুরা এবং দেশীয় বুর্জোয়া বুদ্ধিজীবীক‚ল নসিহত করুক না কেন, হাসিনা-আওয়ামী লীগ তাদের সকল ফ্যাসিবাদী চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র চালিয়েই যাবে।
বিএনপি-জোটও জনগণের জন্য ভালো কিছু নয়। যদিও তারা দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থেকে ও নিপীড়িত হয়ে এখন গণতন্ত্রের নামে বহু কিছু বলে চলেছে। তারা যদি ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসীনও হয়, তাহলেও জনগণ যে তিমিরে ছিলেন সেই তিমিরেই থাকবেন। এর জন্য কোনো প্রমাণ লাগে না, কারণ, এরা আগেও বিভিন্ন দল বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতায় ছিল। এরা সকলেই সাম্রাজ্যবাদের দালাল একই বড় ধনী শাসক শ্রেণির অংশ ও প্রতিনিধি। এদের এইসব নির্বাচনে শ্রমিক-কৃষক-দরিদ্র-নিপীড়িত নারী-আদিবাসী-সাধারণ মধ্যবিত্ত জনগণের কোনো স্বার্থই নেই; তাদের ক্ষমতা-তো আরো দূরের কথা। এসব বুর্জোয়া ভোটে ক্ষমতা হয় বড় বড় ধনী, শোষক, লুটেরা, নিপীড়ক, অত্যাচারীদের; গণবিরোধী আর্মি অফিসার, ফ্যাসিস্ট পুলিশ-র‌্যাব অফিসার, সচিব ও আমলা, শ্রমিক শোষক গার্মেন্ট মালিক, পরিবহন মালিক, বড় ব্যবসায়ী, ভূমিদস্যু, বনখেকো, নদী-খাল-বিল-জলা দখলকারী, ইজারাদার, জোতদার, মাদক ব্যবসায়ী, আদম ব্যবসায়ী, নারী পাচারকারী, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী-মাস্তান, গডফাদারÑ ইত্যাদি ইত্যাদির। আর এদের পেছনে রয়েছে ভারত, আমেরিকা, ইউরোপ, রাশিয়া, চীনের মতো সাম্রাজ্যবাদী, সম্প্রসারণবাদী, আধিপত্যবাদী শক্তিগুলো যারা এদেরকে পেলে-পুষে রাখে, নির্বাচনে মদদ দেয়, এবং এদের সাথে যোগসাজশে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা শোষণ ও লুটপাট করে নেয়। এইসব দেশবিরোধী ও গণবিরোধীদের ক্ষমতা ও শোষণ-লুটপাটকে রক্ষা করার জন্যই পুলিশ-র‌্যাব-আর্মি, সংসদ, সংবিধান, আদালত, আমলারা কাজ করে থাকে। এই রাষ্ট্রযন্ত্র এদেরই হাতিয়ার ও হাতের পুতুল মাত্র। এদের তথাকথিত ‘নির্বাচন উৎসব’ হলো এদের কামড়াকামড়ি ও সমঝোতারই একটা আয়োজন মাত্র, যাতে হাজার হাজার কোটি টাকা তারা ধ্বংস করে এবং বহু মানুষকে বলির পাঁঠা বানিয়ে হত্যা করে।

তাই, জনগণকে নিজেদের ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক মুক্তি পেতে হলে এইসব গণবিরোধী রাজনীতির মুখাপেক্ষী হয়ে থাকলে চলবে না। বরং জনগণের ক্ষমতার জন্য উপরোক্ত গণশত্রুদেরকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করতে হবে; নিপীড়িত জনগণের নিজদের শাসন কায়েম করতে হবে। দেশকে বৈদেশিক শোষক ও এইসব গণশত্রুদের হাত থেকে মুক্ত করতে হবে।

সেজন্য জনগণের নিজদের বাহিনী গড়ে তুলে গণযুদ্ধ চালিয়ে গণক্ষমতা প্রতিষ্ঠা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদের আদর্শে এটা করা সম্ভব। আমাদের পার্টি সে প্রচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। নিপীড়িত জনগণকে সেই ভিন্ন রাজনীতিকেই আঁকড়ে ধরতে হবে। আমাদের সর্বহারা পার্টির নেতৃত্বে জনগণের সশস্ত্র বাহিনীসহ বিবিধ ধরনের সংগঠনে সংগঠিত হতে হবে। এবং সমাজতন্ত্রের লক্ষে নতুন ধরনের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ, তথা জনগণের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি
নভেম্বর, শেষ সপ্তাহ, ২০১৮