গণযুদ্ধজাতীয় মুক্তি সংগ্রাম

কমরেড হিজাম ইরাবতের ১২২ তম জন্মবার্ষিকীতে অনুষ্ঠিত ইম্ফলের সমাবেশে কমরেড আতিফ অনিকের বক্তব্যের বাংলা অনুবাদ

সহযোদ্ধা কমরেডগণ ও মনিপুরের সংগ্রামী জনগন,

লাল সেলাম।বাংলাদেশের জনগনের পক্ষ থেকে আপনাদের বিপ্লবী অভিনন্দন জানাই।কমরেড হিজাম ইরাবতের ১২২ তম জন্মদিবসে আজকের এই সমাবেশে আমাকে কথা বলতে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আমি মনিপুরে এসেছি কমরেড হিজাম ইরাবতের জন্মদিবস উপলক্ষ্যে সোসালিস্ট স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মনিপুরের আমন্ত্রণে।এসএসইউএম সাধারণ সম্পাদক কমরেড ভূষণ ফেসবুকের মাধ্যমে আমাদের সংগঠন বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনকে আমন্ত্রণ করেছিলেন।আমাদের জাতীয় কমিটি সেই আমন্ত্রন গ্রহণ করে আমাকে এখানে পাঠিয়েছে।তাই আমি প্রথমেই ধন্যবাদ দিতে চাই সোসালিস্ট স্টুডেন্টস ইউনিয়ন এর বন্ধুদের যারা আমাদেরকে মনিপুরের জনগনের সাথে একাত্মতা ঘোষণার করবার সুযোগ করে দিয়েছেন।

আজ ১২২ বছর হতে চলেছে কমরেড হিজাম ইরাবতের জন্মগ্রহণের,গত ২৬ সেপ্টেম্বর ছিলো তার ৬৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী, কিন্তু মনিপুর এখনো কমরেড হিজাম ইরাবতের আকাঙ্খিত পথে যেতে পারে নি।

কমরেড হিজাম ইরাবত ছিলেন মনিপুরের জনগনের নেতা,বন্ধু, সহযোদ্ধা ও স্বপ্নদ্রষ্টা। আমরা তাঁকে তার জন্মদিবসে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।

সংগ্রামী বন্ধুগণ,
কমরেড হিজাম ইরাবত স্বপ্ন দেখেছিলেন শ্রেনীহীন সমাজের, তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি শোষণহীন সমাজের।স্বপ্ন দেখেছিলেন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক মনিপুরের।তিনি মনিপুর থেকে বিদেশী শোষণকে উৎখাত করতে চেয়েছিলেন।জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তিনি লড়াই চালিয়েছেন।এই লড়াই চালাতে গিয়ে নিজের শরীরের সাথে লড়াই করার খুব বেশি সুযোগ পান নি তিনি।টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বিপ্লবী জীবন তো এমনই।জনগনের জন্য সারাজীবন তিনি উৎসর্গ করেছেন।আমাদের কি তেমনই হওয়া উচিত নয়?

আমরা কতটুকু হিজাম ইরাবতকে অনুসরণ করতে পেরেছি তা আমাদের পুনরায় ভাবতে হবে।

আমরা বাংলাদেশের জনগন গৌরব অনুভব করছি যে, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময়ে কমরেড ইরাবত প্রায় দু বছর বর্তমান বাংলাদেশের সিলেট জেলে ছিলেন এবং মূলত সেখানেই তার জীবনের বড় ধরনের আদর্শিক পরিবর্তন ঘটে। তিনি সিলেট জেলে বসেই কমিউনিষ্ট হিসেবে শিক্ষা নেন।বাংলাদেশের বিপ্লবীদেরও কমরেড হিজাম ইরাবত এর থেকে শেখার আছে।আমরা তার বিপ্লবী জীবন থেকে শিখতে চাই।

কমরেডগণ,
মনিপুরের জনগনের রয়েছে সুদীর্ঘদিনের সংগ্রামী ইতিহাস।পুরো দক্ষিন এশিয়ার মধ্যে মনিপুর একটি ছোট্ট অঞ্চল হলেও এখাকার উর্বর সংগ্রামী মাটি বিশ্বের মধ্যে সংগ্রামী অঞ্চল হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।
ব্রিটিশ উপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রাম থেকে শুরু করে সকল শোষণ-জুলুমের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক সংগ্রাম করে যাচ্ছে মনিপুরের জনগন।

সংগ্রামী জনতা,

মনিপুরের সংগ্রামী ইতিহাস পাঠ করতে গিয়ে আমরা দেখতে পাই, মনিপুরের সংগ্রামী নারীরা এক অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখে চলেছেন মনিপুরের বিপ্লবী সংগ্রামে।সামাজিক পরিবর্তনের সংগ্রাম মনিপুরের নারীদের এক অনন্য উচ্চ আসনে বসিয়েছে। আমরা ইরোম শর্মিলা চানুর সম্পর্কে শুনেছি।তার দীর্ঘ ন্যায্য লড়াইয়ের পক্ষে আমরা ছিলাম।কিন্তু তার আত্মঘাতী সংগ্রামের ধরন শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করতে পারে নি।কিন্তু মনিপুরের জনগনকে শিখতে হবে সেখান থেকে।শোষকদের কাছে জনগনের জীবন কিছুই নয়।তাই অনশন কোন সমাধান এনে দেবে না।বৈপ্লবিক পরিবর্তন ও শোষণহীন মনিপুরের জন্য চাই বলপ্রয়োগের মার্ক্সবাদী রাজনীতি এবং সেই রাজনীতি অবশ্যই শোধনবাদী(revisionist) সিপিএম(cpm) ধরনের নয়।

এযাবৎ পর্যন্ত মনিপুরের লড়াইয়ে হাজারো জনগন, বিপ্লবী যোদ্ধা প্রান উৎসর্গ করেছেন।এদের মধ্যে অনেকেই জাতীয়তাবাদী সংগ্রামে প্রান দিয়েছেন।জাতিগত সংকীর্ণ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন অনেক সময়েই। কমরেড হিজাম ইরাবত বলেছেন অন্য জাতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নিজ জাতির জন্য লড়াই করা যায় না।তাই জাতিগত লড়াইকে শ্রেনীগত লড়াইয়ের অধীন করতে হবে।স্বাধীন জাতীয় বিকাশ একমাত্র কমিউনিষ্ট সমাজ ব্যবস্থাতেই সম্ভব। জাতি সত্ত্বার সংগ্রাম তাই সমাজতন্ত্র-কমিউনিজম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের অংশ।আশা করি মনিপুরের বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার নিপীড়িত জনগন তা ভালোভাবেই বোঝেন।

আমরা মনে করি, মনিপুরের জনগনের লড়াই ও আমাদের লড়াই এক ও অভিন্ন।সমগ্র দক্ষিন এশিয়ার সাধারণ শত্রুর বিরুদ্ধে আমাদের একসাথে লড়তে হবে। দক্ষিন এশিয়ার জনগনের বিপ্লবী লড়াইয়ে আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে হবে।আমরা বাংলাদেশের জনগনের পক্ষ থেকে আপনাদের প্রতি সেই আহবান রাখতে চাই।
আমরা মনে করি দক্ষিণ এশিয়ার বিপ্লবী সংগ্রাম এর ভেতর দিয়েই পুরো দক্ষিণ এশিয়ো জনগনের গণতান্ত্রিক বিকাশ সম্ভব হবে।হাজারো জাতিগোষ্ঠী তার স্বাধীন স্বকীয় বিকাশের সু্যোগ পাবে।
সারা দক্ষিণ এশিয়ার শোষকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।

শেষে মনিপুরের তরুনদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই,
মাতৃভূমিকে রক্ষার থেকে বড় কোন বিষয় জীবনে নেই।আপনাদের দায়িত্ব আপনাদের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও মনিপুরের মাটিকে রক্ষা করা।আপনারা তরুনরা সকাল আট-নটার উদীয়মান সূর্য । মনিপুরের শ্রমিক কৃষকের নেতৃত্বের লড়াইয়ে আপনাদের অংশগ্রহণ মনিপুরের সংগ্রাম কে বেগবান করবে।

সংগ্রামী বন্ধুগণ,
বাংলাদেশের জনগন ভালো নেই।সেখানে ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছে।জনগনের মত প্রকাশের সকল উপায়কে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।আফস্পার মতোই কালা কানুন ৫৭ ধারা দিয়ে জনগনের কন্ঠ রোধ করা হচ্ছে। কৃষক তার উৎপাদিত ফসলের দাম পায় না,শ্রমিক খেটে মরে অথচ তার জীবন ধারনের জন্য নূন্যতম মজুরী পায় না।ছাত্রদের শিক্ষার নূন্যতম ভালো পরিবেশ নেই।ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে, আর গরীবরা আরো গরীব।
সেখানেও ক্রসফায়ার এর মাধ্যমে হাজার হাজার বিপ্লবীকে হত্যা করা হচ্ছে।সম্প্রতি মাদক বিরোধী অভিযানের নামে জনগনকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে।অর্থাৎ বাংলাদেশেও সাধারণ মানুষ ভালো নেই।
বাংলাদেশ এর নিপীড়িত জনগন আর মনিপুরের নিপীড়িত জনগন একে অপরের বন্ধু। আপনাদের প্রতি আমরা আহবান জানাই আমাদের সংগ্রামের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য।
আমরা মনে করি শ্রমিক সহ নিপীড়িত শ্রেনীর কোন দেশ নেই।তাই সারা বিশ্বের শ্রমিক শ্রেনীর লড়াই এক ও অভিন্ন।

“আপনাদের সংগ্রাম,আমাদের সংগ্রাম
আপনাদের জয়, আমাদেরও জয়
আপনাদের পরাজয়, আমাদেরও পরাজয়।
যদিও আমরা আলাদা দেশ, আলাদা জাতি থেকে এসেছি, কিন্তু আমরা একই নীতি, আদর্শ এবং লক্ষ্যে অবিচল রয়েছি।”

“বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক”

Source: http://e-pao.net/epSubPageExtractor.asp?src=news_section.opinions.Speech_delivered_by_Atif_Anik_on_Irabot_Day_2018